জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে আমরা সবাই ভালো কিছু চাই। চাই আমাদের সাথে ভালো কিছু ঘটুক। চাই সুখী হতে, মন ভাল রাখতে, সাফল্য লাভ করতে। আমরা সবাই দেশের ভাল চাই, চাই দেশ উন্নতির শিখরে পৌঁছে যাক। এই “ভালো” শব্দটা আমাদের জীবনের সাথে, আমাদের বেঁচে থাকার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।
আমি যদি বলি, এই যে বেঁচে আছি;কতজন কতরকম কতকিছু করছি। কেন করছি? উত্তর হবে সেই, ভালো’র জন্যই। আমরা সবাই ভালভাবে বেঁচে থাকতে চাই। এখন আসি মূল প্রসঙ্গে, যে ভালো’র পেছনে প্রতিনিয়ত আমরা দৌড়াচ্ছি, সে ভালো’র সৌরভ কিভাবে আমাদের নিজেদের মধ্যে, এই সমাজের মধ্যে, দেশের মধ্যে ছড়াবে? এর যুক্তিসঙ্গত এবং ভাল একটা সমাধান হলো আমাদের সবার ভালো মানুষ হয়ে যাওয়া। এখন একটা প্রশ্ন জাগে, তাহলে “ভালো মানুষ” মানে কেমন মানুষ বুঝায়? আমার সল্পজ্ঞানের উপর নির্ভর করে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই লিখতে বসা।
অবশ্য এ নিয়ে লেখা একটু রিস্কি, কেউ হয়ত বলবে “আপনে আবার কি এমন ভালো মানুষ হয়ে গেলেন যে, ভালো মানুষের সংজ্ঞাই লিখতে শুরু করলেন!” আসলে আমি কেমন মানুষ সেটা সঠিকভাবে আমার জানার কথা না, তাই এই ব্যাপারে কিছু বলতে পারছিনা। লিখার জন্য নিজের ভেতর একটা তাড়না সৃষ্টি হয়েছে, তাই লিখতে বসলাম।
ভালো মানুষের সংজ্ঞা নানান মানুষের কাছে নানান রকম। কেউ মনে করে ভালো কাজ করে বেঁচে থাকা, কেউ আবার মনে করে ধর্ম সঠিকভাবে পালন করে বেঁচে থাকা। অনেকই বলে, মনকে সুন্দর করা। তবে ঘুরেফিরে সব ই এক ই কথা বলে। ভালো’র কথা। আমি ভালো মানুষের মানে নিয়ে ভাবতে গিয়ে একে তিনভাগে ভাগ করে ফেললাম। প্রথমত, দ্বিতীয়ত, তৃতীয়ত। এদের সবাইকে আমি ভালো মানুষ বলি। প্রথমের চেয়ে দ্বিতীয় আরেকটু বেশি ভালো, দ্বিতীয়র চেয়ে তৃতীয় আরেকটু বেশি ভালো। এগুলো কেবলই আমার নিজস্ব মতামত।
প্রথমতঃ আমি শুরুতেই সেসব মানুষকে ভাল মানুষ বলে দিতে চাই, যারা কোন মানুষের সাথে খারাপি করে না । আমি মনে করি কোন মানুষের ভেতর যদি এই একটি গুন থাকে, তবে সে একজন ভাল মানুষ। আমি তাকে শ্রদ্ধা করি। এখন এই বাক্যটাকে আরেকটু ব্যাখ্যা করলে দেখি, এর মানে হল সে কোন মানুষের ক্ষতি করে না, দেশের বিরুদ্ধে কিছু করে না, চাঁদাবাজি করে না, ঘুষ নেয় না, ঘুষ দেয় না, অন্যায় কাজ করে না, প্রশ্ন আঊট করে না, মেয়েদের টিজ করে না, কারো ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করে না, পিতা-মাতার সাথে খারাপ আচরণ করে না। এবং আরো অনেক কিছু যেগুলার মধ্যে খারাপ নিহিত আছে, সেগুলো সে করে না।
দ্বিতীয়তঃ প্রথমের গুন গুলো সাথে নিয়ে সে সামনে আগাবে। এবং সে নিয়মের বাইরে কোন প্রাণীর ক্ষতি করবে না। নিজের ক্ষতি করবে না। মানুষের সাথে উঠা বসায় ভাল ব্যাবহার করবে। বই পড়বে। চিন্তা করতে জানবে। নিজের ভুল গুলো স্বচক্ষে দেখতে পারবে। নিজের ভুল স্বচক্ষে দেখার একটা আইডিয়া আমার কাছে আছে। তা হলো, ধরুন আপনার সাথে একজন মানুষের ঝামেলা হলো; এখন স্বাভাবিক প্রকৃতিগতভাবেই আপনি মনে করবেন সমস্যা ওই লোকের আর ওই লোক মনে করবে সমস্যা আপনার। এখন আপনি আপনার অবস্থান থেকে একটু সরে দাড়াবেন এবং ওই লোকের পারিপার্শিক অবস্থা জেনে কল্পনায় তার অবস্থায় গিয়ে দাড়াবেন। এবার আপনি এবং কল্পনার আপনি দুজন কথা বলুন। স্বচক্ষে নিজের ভুল দেখুন। এবং এই ভাল মানুষ নিজের সাধ্যের মধ্যে অন্যকে সাহায্য করবে। আমার পক্ষ থেকে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রইল।
তৃতীয়তঃ প্রথম ও দ্বিতীয়ের গুন গুলো সাথে নিয়ে সে সামনে আগাবে। সে মানুষ, প্রাণী সহ সকল সৃষ্টিকে ভালবাসবে। সমাজ, দেশ, বিশ্বের মানুষের সুখ – দুঃখ তাকে ভাবাবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। এবং অন্যায়কে পদদলিত করে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবে সবসময়। দেশের প্রতি ভালবাসা থাকবে আকাশ সমান। মন হবে সমুদ্রের মত বিশাল। অন্যের দুঃখে সে ব্যাথিত হবে। উদার হবে সকল মানুষ, প্রাণীর প্রতি। ন্যায়ের কথা বলবে। তার ভেতর আরো অনেক গুন থাকবে, যেগুলো সম্পর্কে হয়ত আমার এখনো ধারনা নেই। আমার পক্ষ থেকে এই মহান হৃদয়ের অধিকারী মানুষদের জন্য শ্রদ্ধা রইল।
এই হলো আমার মতে ভাল মানুষের বর্ণনা। এই লেখা নিয়ে আপনার কোন মতামত বা সমালোচনা থাকলে নির্দিধায় কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। তো শেষে , আমি আমাকে সহ সবাইকে একটা কথা বলে শেষ করবো……
চলেন আমরা সবে ভাল মানুষ হয়ে যাই।